Bengali culture, Politics

চৌম্বকত্ব

ক বন্ধু একবার যে সবকিছু খায় তার এক কথায় প্রকাশ করেছিল সবখেউকা। বাঙালি মাত্রেই সবখেউকা। আমরা খাবারও খাই, মদও খাই, সিগারেটও খাই। আবার পাল্টি আর খাবি তো ঘনঘন খাই। তবে চুমু খাওয়া নিয়ে এরকম তোলপাড় যে কী কারণে শুরু হল কে জানে। কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়ছিলাম যেখানে লেখক বলছিলেন কোন একটা আচার অন্য সংস্কৃতি থেকে বেমালুম ঝেড়ে দেয়া যায়না, সেই সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট না জেনে। সেদিক থেকে দেখলে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া একটা পশ্চিমী আচার, এখানকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে সেটা দৈনন্দিন অকিঞ্চিৎকর ঘটনা হলেও সেটার অন্ধ অনুকরণ করে ওরা খাচ্চে তাই আম্মো খাই বললে, তাতে আপত্তি করার কিছু না থাকলেও দু ধরনের মানুষ মনে করে এবার দেশটা জাহান্নামে গেল। এক যারা এখনো বাপ-ঠাকুদ্দার যুগে পড়ে আছে যাদের কাছে মাঝ রাতে ওগো শুনছর চেয়ে বেশি কিছু মানেই প্রেমের আদিখ্যেতা, সকাল বেলা চান করে কালী, লক্ষ্মী, রামকৃষ্ণ, সারদার ছবিতে পেন্নাম ঠুকে বাসে চাপে, তারপর সারাদিন মুখের মারিতং জগত আর কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। আর একদল হল যাদের চুমু খাবার, প্রেম করার ইচ্ছে ষোলআনা কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়না, তারা সঙ্গত কারনেই ভাবে এসব স্বেচ্ছাচার বন্ধ হোক একেই জীবনটা আলুনি হয়ে আছে তার ওপর চোখের সামনে কপোতকপোতীরা চুমাচাটি করছে দেখলে, ফ্রাস্ট্রু খেয়ে রাস্তায় বেরনোর জো থাকবেনা। সমাজে খাওয়ার প্রতি বিস্তর বিধিনিষেধ, বেণীমাধব শীল বাবু তো হুড়কো দিয়ে গেছেনই তাছাড়াও রয়েছে কি কি খেতে গেলে লুকিয়েচুরিয়ে করা ছাড়া গতি নেই- চুমু, মদ, গরু। চুমু খেয়ে বিপ্লব সাধু প্রস্তাব কিন্তু বাঙালি সমাজ এখনো অতটা স্বাধীন হয়নি যে কে কী বলল তাতে ছেঁড়া যায় বললেই সব চুকেবুকে গেল, এখানে গা জোয়ারি মরাল পুলিস সব। কম্যুনিস্টগণও ব্যতিক্রম নন, ষাট সত্তরের নবজাগরণে হয়তো শহুরে বাঙালি কিছুটা লিবারাল তবু ঘরে তো সেই লক্ষ্মীর পট, তাই যে মেয়েগুলির ছবি ছেপেছে চুমু খাবার তাদের কপালে “হতচ্ছাড়ি বংশের নামে চুনকালি দিলি” টাইপের হেনস্থা ছাড়া আর কিছুই জুটবেনা। ছেলেদের ভাগ্য অতটা মন্দ নয়, হাজার হলেও বংশের বাতি বলে কথা. আর এখন বাবারাও ছবি বিশ্বাস টাইপের কুলাঙ্গার বেরিয়ে যাও টাইপের ডায়লগ ঝাড়েনা, তাদের বেলা “সব ওই মেয়েটার দোষ, আমাদের হীরের টুকরো ছেলেকে বশ করেছে, আমার মাথার দিব্যি রইল ওর সাথে কোনো সম্পকর্ রাখিসনা” জাতীয় জননী থেকে চোতা করা বুলি বরাদ্দ বড়জোর। যাই হোক যারা এই প্রতিবাদে সামিল হলেন তাদের বলি ব্র্যাভো, চুমু খাও একশ বার হাজার বার খাও, ভেক বকধার্মিক বাঙালি মরাল পুলিসের লালটু চাঁদবদনে এরকম সপাটে থাপ্পর আরো গুটিকয় দরকার, তবে যেটা দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম সেই প্রেক্ষাপটটিও যেন সব সময় মনে থাকে, অনেকে এই ব্যক্তিগত জীবনে সমাজ শোধকদের নাক গলানোর বিরুদ্ধে বিরক্ত হলেও, তাদের সামাজিক পারিবারিক অবস্থান থেকে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য যে বিস্তর সাহস দরকার সেটা সকলের থেকে আশা করে তাদের অপ্রস্তুত করে এই বিক্ষোভ থেকে বিমুখ না করে, বরং সবাইকে সামিল করলে তবেই আন্দোলনের সার্থকতা। সেটা না হলে এই আন্দোলনও আর পাঁচটা শহুরে শখের প্রতিবাদে এসে দাঁড়াবে, যেখানে গ্রাম মফস্বল ব্রাত্য। 

Advertisement
Standard