Bengali, Cuisine

ফিশ কবিরাজি আর মিষ্টি দই হ্যাক

এবার দুটো চটজলদি রান্নার পদ্ধতি লিখছি। প্রথমটা আমার আবিষ্কার, দ্বিতীয়টি আমার কলেজের এক বন্ধুর, আমি টুকে শেয়ার করছি।

ফিশ কবিরাজি

ফিশ কবিরাজির অনেক রেসিপি ইন্টারনেট ঘাঁটলে পাওয়া যাবে। সেগুলো আমার এই কবিরাজির চেয়ে ঢের ঢের ভালোও হবে আশা করা যায়। তবু এই পদটা শেয়ার করলাম কারণ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এটা রান্না করতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে। এতো তাড়াতাড়ি আর কোনো হাঙ্গামা ছাড়া কবিরাজি রেসিপি হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ফেসবুকের দৌলতে অনেক নতুন ব্যাপার-স্যাপার ই চোখে পড়ে, সেরকমই কলকাতার এক গ্রুপ আছে যেখানে রকমারি বাঙালি ও অবাঙালি খাবারের খোঁজ পাওয়া যায়। বিদেশে আসার পর থেকে অনেক খাবারের জন্যই হাপিত্যেশ করতাম কিন্তু আস্তে আস্তে বেশিরভাগ খাবারই দেখলাম কিনতে পাওয়া যায় অথবা হুবহু এক না হলেও অন্য দেশের খাবার পাওয়া যায় যা আমাদের খাবারের মতোই। যেমন মোমো খাবার ইচ্ছে করলো তো পোলিশ দোকানে গিয়ে কিনে নিলাম পিয়েরোগি, ভাজলে ফ্রাইড মোমোর মতন স্বাদ। যাহোক, তা নিয়ে অন্য একদিন লেখা যাবেখন। দু-তিনটে খাবার তবে পাওয়া দুষ্কর আর তাদের জন্যে সেইজন্য হাপিত্যেশও বেশি। সে সব খাবারের মধ্যে এক হলো ফিশ বা চিকেন কবিরাজি। এছাড়াও আছে ঢাকাই পরোটা, ইলিশ মাছের ডিম্, ইলিশ শুঁটকি ইত্যাদি।

যাক ফিশ কবিরাজিতে ফেরা যাক। হ্যাঁ, রান্নার উপায় পড়ে আমাকে গালি দিতে শুরু করবেননা যেন, আগেই বলেছি এটা শর্টকাট রান্না। বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্যে। টাটকা ভেটকি মাছের ফিলে দরকার নেই এই কবিরাজির জন্যে। বাজার থেকে কিনুন Breaded Fish যেগুলো সাধারণত ওভেনে বেক করতে হয়। Basa , Hake, Haddock অনেক প্রকারের মাছই পাওয়া যায়। মাছ গুলোকে ওভেনে বেক করে নিন বা তাওয়াতে অল্প তেল দিয়ে ভেজে নিন। প্যাকেটে যতক্ষণ রান্না করতে বলা আছে তার চেয়ে ৫ মিনিট কম রান্না করুন, কারণ কবিরাজি বানানোর সময় আর একবার ভাজা হবে। এবার খানিক লেবুর রস, কাঁচালঙ্কা আর রসুন বাটা-র একটা কাই তৈরী করে মাছের অল্প ভাজা টুকরোগুলোর ওপর আলতো করে মাখিয়ে নিন। এবার একটা চওড়া পাত্রে বেশ কিছু ডিম্ ফেটিয়ে নিন। তাতে অল্প নুন, গুঁড়ো মরিচ দিতে পারেন। এবার কড়াই বা ফ্রাইং প্যানে অনেকটা তেল দিয়ে ফেটানো ডিম্ অল্প অল্প করে ছিটিয়ে দিতে হবে। একসাথে অনেকটা দিলে কবিরাজির জায়গায় ওমলেট হয়ে যাবে, তাই খেয়াল রাখতে হবে খুব ছোটো ছোট ফোঁটার আকারে দিতে। whisk ব্যবহার করতে পারেন, নাহলে হাত ডিমের মিশ্রনে ডুবিয়ে কড়াইতে হাতটা ঝেড়ে নিন। তেল বেশ গরম হওয়া দরকার। এবারে বেশ কিছুটা ডিম্ দেয়ার পর আস্তে আস্তে খাস্তা হয়ে ভেজে ওঠা ডিমগুলো যখন একসাথে জুড়ে জুড়ে একটা bedding তৈরী করেছে তখন তার ওপর একটা মাছের টুকরো দিয়ে দিন। তারপর আবার এক প্রস্থ ডিম্ ছড়িয়ে দিন মাছের টুকরোর ওপর। সাথে সাথে না উল্টে প্রথমে হাতায় করে গরম তেল ডিমের ওপরে দিয়ে দিন যাতে ওল্টানোর আগেই ডিমের ঝুরি তৈরী হয়ে যায়। এবার উল্টে আর এক-দেড় মিনিট রেখে তুলে নিন। সাথে কাঁচা পেয়াঁজ, শসা আর সর্ষের কাসুন্দি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

ফিশ কবিরাজি সাথে কাসুন্দি আর শসাকুচি

ফিশ কবিরাজি সাথে কাসুন্দি আর শসাকুচি

আর চিকেন কবিরাজি? মাছের বদলে কিনে আনুন চিকেন বা টার্কি escalope। বাকিটা কপি পেস্ট।

মিষ্টি দই

আমি যে সময় বড় হয়েছি তখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ ছিলোনা। গরমকালে তাই মিষ্টির দোকান থেকে কিনে আনা ঠান্ডা মিষ্টি দইয়ের মাহাত্ম্যই ছিল আলাদা। সেই মিষ্টি দইয়ের পাশাপাশি আর একটা প্রথারও চল ছিল খুব, ঘরে পাতা দই। দইয়ের ভাঁড়ে থেকে এক চিলতে দই তুলে নিয়ে তাতে হালকা গরম দুধ দিয়ে সারা রাত রেখে দিলেই হয়ে যেত এই ঘরে পাতা দই। তারপর আবার সেই দইয়ের থেকে খানিকটা সাজা তুলে রেখে আবার পরের দিনের দই পাতা হতো। এভাবে চলতো বেশ কয় দিন, তারপর দইটা কেমন জল জল হয়ে আসতো আর স্বাদটাও হয়ে যেত কেমন ঝাঁঝালো। কলকাতার বাইরে মিষ্টি দই পাইনি, তাই তেমন খাওয়াও হয়নি এতদিন। এখানে সুপারমার্কেটে একটা বস্তু পাওয়া যায়, Creme Caramel. খেলে মনে হবে যেন লাল দই খাচ্ছি। আর এখানে yogurt বলে যেটা পাওয়া যায় তা আমাদের টক দইয়ের সমান। তাও আবার বেশ জোলো।

চটজলদি দই বানানোর এই পদ্ধতির কৃতীত্ব আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক সহপাঠিনীর। সংসার, ছেলেপুলে, ডক্টরেট এসব সামলেও বিভিন্ন জিনিস রান্না এবং তৈরির চেষ্টা করে। তার দইয়ের রেসিপি দেখে বিশ্বাসই হয়নি ব্যাপারটা এতো সহজ। অনেকটা আর্কিমিডিসের ইউরেকা বলার মতো, ছাগল এরকম একটা সহজ ব্যাপার এতদিন Zানতি পারনির মতো। এখানে বিলকুল কপি মারলাম রান্নাটা। তবে শেষে একটা সংযোজন রইলো যেটা আমার নিজের, খানিকটা ভুলক্রমেই আবিষ্কৃত।

যাক, মিষ্টি দই বানানোর জন্যে লাগবে খানিক Plain Yogurt আর কনডেন্সড মিল্ক। দুটোই সহজলভ্য, যেকোনো সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। এবার একটা মাইক্রোওয়েভ প্রুফ পাত্রে সমান পরিমান Yogurt আর কনডেন্সড মিল্ক নিতে হবে। মিষ্টি যদি একটু কম পছন্দ করেন তাহলে সামান্য কম কনডেন্সড মিল্ক, মোটামুটি ৬:৪ অনুপাতে মেশাতে হবে। হাতা বা চামচ দিয়ে পুরো মিশ্রণটাকে আলতো করে বেশ খানিকক্ষণ মিশিয়ে নিন। এরপর পুরো পাত্রটা মাইক্রোওভেয়ে দিয়ে, Medium পাওয়ারে কিছুক্ষন গরম করতে হবে। (আমার মাইক্রোওয়েভ ৭৫০W, আমি ৩০০ এ বেক করেছি) । কতক্ষন রান্না করতে হবে সেটা পরিমানের ওপর নির্ভর করছে। এক ছোট বাটি করতে ১ মিনিট, ১ কেজি করতে প্রায় ১৫ মিনিট কিন্তু এক বারে ২ মিনিটের বেশি রাখবেননা। ওভেন থেকে বার করলে মিশ্রণটা তখনও একটা নরম থাকা দরকার, অনেকটা জেলির মতো, নাহলে দই জমাট হয়ে যাবে। ব্যাস, খানিকক্ষণ ঠান্ডা হতে দিয়ে সোজা পেটে চালান করে দিন, নাহয় ফ্রিজে রেখে খান ঠান্ডা মিষ্টি দই। গ্যারান্টি দিলাম দোকানের Yogurt বা Creme Caramel এর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা স্বাদ পাবেন।

তাছাড়া অন্যান্য স্বাদও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যেমন কনডেন্সড মিল্ক পরিমানের আদ্ধেক দিয়ে, বাকিটা দিন mango pulp, আম দই হয়ে যাবে। আমি নলেন গুড় দিয়েও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পরিমান ঠিক হয়নি, তাই দইটা কেটে গিয়েছিল।

মিষ্টি দই মাইক্রোওয়েভ থেকে বার করার পর

মাইক্রোওয়েভে মিষ্টি দই বানানোর পদ্ধতি। ভিডিওতে দেখুন।
(সূত্র: ঈশান টিউব )

এ তো গেলো চোথা মারা পার্ট। শেষটুকু ও বলে দি। বেশ খাচ্ছিলাম দই বাটি বাটি তৈরী করে, হঠাৎ শখ হলো এক গামলা দই বানাবো। ৫০০গ্রাম Yogurt আর ৩৯০গ্রাম কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে দই বানাতে গিয়ে এতক্ষন লাগলো যে শেষে দইটা একদম জমাট বেঁধে গেলো। সেই মিষ্টির দোকানের হালকা নরম, চামচ চালালেই পরত পরত উঠে আসবে সেই ভাবটা আর নেই। কিন্তু খেতে গিয়ে মনে হলো আরে এ তো অনেকটা শ্রীখণ্ড। তাই বলি, যদি শ্রীখণ্ড বানাতে যান এই উপায়ে, একটু বেশিক্ষন মাইক্রোওভেয়ে রাখবেন আর শেষের ২ মিনিট ফুল পাওয়ারে। শ্রীখণ্ড বানানোর সময় এলাচ, জাফরান, পেস্তা কুচি এসবও অল্প দিয়ে দেবেন। তারপর ফ্রিজে রেখে দিন। জমে যাবে। পাক্কা।
Advertisement
Standard

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.