Bengali culture, Cuisine, Nostalgia

পৌষ পার্বন পুলি পিঠে আর বিশ্বায়ন

জ মকর সংক্রান্তি। জানতাম না, মনে থাকার কথাও নয় তবু সকাল বেলা ফেসবুকে দেখি পাড়ার পুরনো বন্ধু মেরিন বেজায় চটে লিখেছে মকর কেমন দেখতে হয় জানা আছে? যুক্তিটা ফেলার নয় আর এই সোশাল আদিখ্যেতা দেখে আমারো একই রকম পিত্তি জ্বলে গেল। হয়ত আর কিছুদিন পর অমাবস্যা পূর্ণিমা অম্বুবাচী ঘেঁটুপুজো কোনো কিছুই বাকী থাকবেনা। আমাদের পূর্বজ বাম লিডাররা যেকোনো পরিবর্তনকে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র বলে চালানোর চেষ্টা করতো, তবে একটু খতিয়ে দেখলে মনে হতেই পারে যে এই সব লোকাচার কেমন ভাবে বিশ্বায়নের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। একদিকে সময় আর সামাজিক যোগাযোগের কমতিতে এসব মকর সংক্রান্তি-টান্তি শিকেয় উঠেছে, আবার সেরকমই বাজার অর্থনীতির হাত ধরে এসব হারিয়ে যাওয়া আচারবিচার থেকে মুনাফা তুলতে হাজির পুরনো আচার আচরনের ধুয়ো তোলা সংস্থারা। যেমন ঘরোয়া খাবার নিয়ে উপস্থিত ভজহরি মান্না, তেরো পার্বন, ৬ বালিগঞ্জ প্লেস। প্রথমে বিশ্বায়ন মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডালের বদলে কেএফসি ডোমিনোস ইত্যাদি খাওয়া শিখিয়ে তারপর নস্টালজিয়ার খোঁচা মেরে সেই মাছের মাথার ডাল ঘরে ২৫/- টাকার বদলে ২০০/- টাকা দিয়ে কেনাচ্ছে। সেভাবেই হয়ত অদুর ভবিষ্যতে আমরা পেয়ে যাবো পৌষ পার্বনে পুলি পিঠের হোম ডেলিভারি। তারপর মুখে গোটাকয় পিঠে ঠেসে সেলফি— ব্যাস ষোল আনা বাঙালিয়ানা ফলানো হয়ে গেল।

সব প্রজন্মই মনে হয় ভাবে যে তাদের জীবনকালটাই সবচেয়ে সেরা, নতুন পুরনো দুইয়ের নিপুন সম্মিলন। আমারো সেরকমই মনে হল আজ যে অন্তত আমাদের আশির দশকে বড় হওয়া প্রজন্ম এসব প্রচলিত প্রথাগুলোর সাথে বহুল পরিচিত ছিল। সেই ভাবনা থেকেই ইচ্ছে হল বিশ্বায়নকে তুলোধোনা বা ফেসবুকে মাকড় সংক্রান্তি জাহির না করে খানিক পৌষ পার্বনের আসল উৎকর্ষ নিয়েই খতিয়ে দেখা যাক। হ্যাঁ পিঠে পায়েস এইসব।

মকর সংক্রান্তি খালি নামেই ছিল, আমরা চিরকাল জেনে এসেছি যে এটা পৌষ পার্বন, পিঠে খাওয়ার দিন। ধর্মীয় আচার-টাচার হয়তো কিছু আছে কিন্তু সেসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি চোখের সামনে রসে টইটম্বুর পিঠের ছবি ভেসে ওঠায়। আর আগে খাওয়া মানে যে শুধু নিজের মাইক্রো পরিবার তা তো ছিলনা, আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশী এমনকী কিছু দুরে থাকা আত্মীয়স্বজন সবাইকেই দিয়েথুয়ে তারপর যা পড়ে থাকতো তা দিয়েই পরের তিন দিন টানা পিঠে খাওয়া চলত। বাবার অফিস, আমার স্কুল সবেতেই টিফিন পিঠে তারপর খেলতে যাবার আগে গোটাকয় আর সন্ধ্যাবেলা টিফিনে আবার সেই পিঠে। এখানে সেই পিঠেরই একটা পাঁচালি লেখার চেষ্টা করলাম। যদি কেউ আর কিছু মনে করতে পারেন লিখে পাঠালে বাধিত রইব।

পিঠের লিস্টি

১) পাটিসাপটা : পৌষ পার্বনের ন্যুনতম লেভেল। আর কিছু না হলেও খানকতক পাটিসাপটা ঠিকই হত বাড়ি বাড়ি। আর বানানোর কিছু কিছু ট্রিক মনে আছে। চালগোলা চাটুতে দিয়ে তারপর আস্ত তেজপাতা দিয়ে মিশ্রনটাকে ছড়িয়ে দিতে হত। পরে বিদেশে প্যানকেক বা ক্রেপ বানানোর পদ্ধতি দেখে সেই পাটিসাপটাই মনে পড়ে যেত। আর পুর বানানোরও বিশাল সরঞ্জাম আগের রাত থেকে নিরামিষ বঁটির মাথায় নারকেল কোরার যন্ত্র। তারপর গুড় দিয়ে কড়াইতে মেশানো। জল মরে গিয়ে গুড় আর নারকেল মিশে গেলে পুর তৈরী হয়ে গেল। কেউ কেউ গুড়ের জায়গায় চিনি দিয়েও বানাতো পুর। খোয়ার পুর এলো বেশ কিছুদিন পর।

২) মালপোয়া : ভানুর সেই মাসিমা মালপো খামুর মালপোয়া ছিল দ্বিতীয় কমন পিঠে। মালপোয়ায় পুরও লাগেনা তাই বানানো সবচেয়ে সোজা। নিতান্ত আনাড়ি রাঁধুনি যে আর কোন পিঠে পারেনা, সে অবধি মালপোয়া বানাতে পারদর্শী। পিটুলি গোলা বা ময়দার গোলা তৈরি করে গরম তেলে ভেজে তারপর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নিলেই মালপোয়া রেডি। মালপোয়ার গোলায় খানিক মৌরি মিশিয়ে দিলে বেশ স্বাদ হয়। কতখানি পিটুলিগোলা কিভাবে কড়ায় দেয়া হল মালপোয়ার আকার আর স্বাদ তার ওপর নির্ভর করে। অল্প জায়গা জুড়ে বানালে ভেতরটা বেশ নরম থাকে। আর বেশী জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে দিলে মালপোয়া হয় বেশ মুচমুচে। বানানো এত সোজা বলে পৌষ পার্বন ছাড়াও অন্যান্য সময় পাড়ার মিষ্টির দোকানে বা লুচি কচুরির দোকানেও মালপোয়া বিক্রি শুরু হয়ে যায় দস্তুরমত।

৩) গোকুল পিঠে : গোকুল পিঠে বানানো তেমন কঠিন না হলেও খুব যে চল ছিল তেমন নয়। যতদুর মনে পড়ে, পাটিসাপটার যে পুর সেটা দিয়েই গোকুল পিঠের পুর বানানো যেত। নারকেল কোরা আর গুড়ের পুর চেপ্টে অনেকটা আলুর চপের পুরের আকারে বানিয়ে পিটুলি গোলায় ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিলে বড়া তৈরী। তারপর বড়াগুলো চিনির শিরায় ডুবিয়ে নরম হয়ে এলে গোকুল পিঠে রেডি।

৪) রস বড়া : পিঠেদের মধ্যে এটা বানানো বেশ কঠিন। বিউলির ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে ডাল মিহি করে বেটে ছোট ছোট গোল্লা বানিয়ে ডুবো তেলে প্রথমে ভাজা হতো। বড়াগুলো বেশ লালচে হয়ে এলে নামিয়ে চিনির শিরায় ডুবিয়ে রেখে দিয়ে গোল্লাগুলো নরম হয়ে গেলে রস বড়া তৈরী। তবে, কঠিন পার্টটা হলো ডালবাটা কতটা ঘন হবে সেটা। খুব ঘন হলে বড়ার ভেতরটা রান্না হবেনা, ডাল কাঁচা কাঁচা রয়ে যাবে। আর অন্যদিকে ডালবাটা বেশি পাতলা হলে তেলে ছাড়ামাত্র ডালগুলো আলাদা হয়ে যাবে। বড়া কতখানি ভাজা হবে সেটাও জরুরি। কম ভাজা হলে ডাল ভেতরে কাঁচা থেকে যাবে, যা খেতে অখাদ্য। আর ভাজা বেশি হলে বাইরেটা কড়া হয়ে যাবে, রসে ডোবালে বড়াগুলো তেমন রস শুষতে পারবেনা। প্রত্যেক বছর পৌষ পার্বনে বাবা খুব উৎসাহ নিয়ে রসবড়া বানানোর চেষ্টা করলেও কোনো না কোনো দুর্যোগে পারফেক্ট রসবড়া কখনো খাওয়া হয়নি।

৫) দুধ পুলি : দুধ পুলি ছিল পৌষ পার্বনের ম্যাগনাম ওপাস। খেতে অসাধারণ কিন্ত ঠিকঠাক বানানো প্রায় দুঃসাধ্য। পুলিগুলো বানানো হত ময়দার লেচি বেলে খোল বানিয়ে তার মধ্যে নারকোল কোরা আর গুড়ের পুর ভরে অনেকটা মাকুর আকার দিয়ে। তারপর দুধ চিনি আর এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে তাতে পুলিগুলো দিয়ে আরো বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে দুধ বেশ খানিকটা মরে এলে দুধ পুলি তৈরী। শুনে মনে হয় এ আর এমন কী? পুলি কেমন দাঁড়াবে সেটা সবটাই নির্ভর করছে খোলের ওপর। ময়দার খোল বেশি মোটা হলে পুলিগুলো শক্ত শক্তই রয়ে যাবে, পুলি খেয়ে মনে হত যেন ময়দার তাল। আর খোল বেশি সরু হলে দুধ পুরো ঘন হবার আগেই পুলির খোল ভেঙ্গে পুরগুলো দুধে মিশে যাবে। দুধ পুলি করার অনেক চেষ্টা দেখেছি আমাদের বাড়ি বা আত্মীয়দের মধ্যে কিন্তু খুব কমই খেয়েছি যা খেয়ে মনে হয়েছে বাঃ দারুন। বেশির ভাগ সময়েই সেটা দাঁড়াত শক্ত ময়দার গোলা দাঁত ফোটানো যাচ্ছেনা অথবা চামচ ঠেকানোর আগেই পুলি ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে — এজাতীয় বিপর্যয়ে।

৬) চুষির পায়েস :  ছোটবেলা থেকেই দেখতাম বাড়িতে চুষি বানানোর চল। আমারও সেই দেখাদেখি চুষি বানানোর বায়নাক্কা দেখে বাবা মা আমার হাতে একটা ময়দার গোলা ধরিয়ে দিত।  খুব উৎসাহ নিয়ে শুরু করলেও যখন দেখতাম বাবা মার বানানো সমান আর সরু সরু চুষির পাশে আমার এবড়োখেবড়ো মোটা মোটা চুষিগুলো, সে দৃশ্য দেখে বেশ নিরুৎসাহীই হয়ে যেতাম। পৌষ পার্বনে চুষি করার জন্যে তোড়জোড় শুরু হত অনেক আগে থেকে। ময়দার লেচি পাকিয়ে তার একটা দিক টেনে সুতোর মত লম্বা করে সেটা হাতের চেটোতে ঘষে ঘষে চুষি বানানো হত। মনে হয় অন্যান্য সময়েও অনেক জায়গায় চুষির পায়েসের চল ছিল কারণ পায়েসের গোবিন্দভোগ চালের দাম চিরকাল খুব চড়া। চুষি তাই কমদামী বিকল্প। হয়ত এখন চেষ্টা করলে বানাতে পারব চুষি, কিন্তু সেই সব সমান সাইজের আর সরু সরু চুষি অসম্ভব। তো সেই বানানো চুষি তারপর রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিলে আসল হুজ্জুতি শেষ। বাকিটা যেরকম পায়েস রান্নার পদ্ধতি তাই। ঠিক মনে পড়ছেনা শেষ কবে চুষির পায়েস খেয়েছি অন্তত পঁচিশ বছর তো হবেই, তাই ঠিক মনে পড়ছেনা চালের পায়েসের সাথে স্বাদের কি তফাত ছিল।

৭) সরা পিঠে : যতদুর মনে পড়ছে এটার চাটগাঁর নাম ছিল আস্কে পিঠে। অনেকে ভারা পিঠেও বলে। সরা পিঠে বানানোর উপকরন খুব বেশি না হলেও বানানোর ঝক্কি অনেক। তবে কারো যদি বাড়িতে ইডলি তৈরির ডিস থাকে তাহলে সরা পিঠের জন্যে সেটা যথেষ্ট। এমনকি সরা পিঠে খেতেও অনেকটা ইডলিরই মত। চাল গুঁড়ো করে তাতে নারকোল কোরা মিশিয়ে খুব সম্ভব অল্প জল দিয়ে মিশ্রণটাকে সামান্য ভেজাভেজা করা হত যাতে ঝুরঝুরে হয়ে পিঠে ভেঙ্গে না যায়। তারপর তালু ভর্তি সেই চালগুঁড়ো নিয়ে ইডলির আকারে বানিয়ে হয় ইডলি ডিসে বা হাঁড়িতে জল ফুটিয়ে তার ওপরে দিয়ে জল ফোটার বাস্প দিয়ে পিঠে তৈরী হত। তারপর সেই গরম গরম পিঠে পরিবেশন করা হত খেজুরের গুড়ের হাঁড়ির ওপরে জমে থাকা স্বচ্ছ গুড় দিয়ে, যাতে নিচের দিকের দানাদানা গুড় না থাকে। আস্কে পিঠে একবারই খেয়েছিলাম ঠাকুমা বানিয়ে খাইয়েছিল যখন প্রথম দেখা করতে যাই, নিজেদের জমির ধান আর গুড় দিয়ে তৈরী, তা ছাড়া বার কয়েক সরা পিঠে খেয়েছি কিন্তু সেগুলো লোকে এলেম কুড়োনোর জন্যে বানিয়েছিল খেতে অখাদ্য না হলেও সেরকম সুস্বাদু ছিলনা।

৮) তিল পিঠে : এটাও খুব রেয়ার বাঙালি বাড়িতে, যদিও আসামে তিল পিঠের চল প্রচুর।  আমার বার দুয়েক খাবার সৌভাগ্য হয়েছে। রেসিপি পাটিসাপটার মতই খালি পুরের জন্য নারকেল কোরা না দিয়ে সাদা কালো মেশানো তিল আর গুড় ব্যবহার করা হয়।

পিঠের পুরের জন্য যেমন লিখেছি আখের গুড় ব্যবহার করা হত সেটা সব সময় ঠিক না। খেজুরের গুড়ই প্রধানত ব্যবহার করার কথা কিন্তু অনেক সময়ই বাজারে খেজুর গুড় আসত অনেক পর, তাই সেটা না পাওয়া গেলে পাটালি না হয় আখের গুড়ই ভরসা ছিল। ইদানীং কালে খোয়া ক্ষীর দিয়ে বানানোর বেশ চল, খেতে যে খারাপ তা নয় তবে খোয়া চালু হবার মুল কারন হয়ত শর্টকাটে কাজ সারা, নারকেল কোরানো, গুড় দিয়ে জ্বাল দেয়া সেসব ঝুটঝামেলা থেকে নিস্কৃতি। আর চাল যে কি ধরনের নেয়া হত সেটা মনে আসছেনা। নবান্ন উৎসব যখন মনে হয় নতুন চাল মানে আমন ধানের চালই ব্যবহার করা হত। এখন দেখি ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা চাল আলাদা পাওয়া যায় কিন্তু আমার মনে আছে দেখতাম পৌষ পার্বনের আগের দিন বাড়িতে চালের স্তুপ শিল নোড়া দিয়ে বাটার কাজ চলছে।

এসব বহুপ্রচলিত পিঠের বাইরেও যে কত রকমের পিঠে আছে তার ইয়ত্তা নেই। মকর সংক্রান্তি মনে হয় গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে পালন করা হয় বিভিন্ন ভাবে, কিন্তু পিঠে যতদুর জানি মূলত পূর্ব ভারতেই সীমাবদ্ধ —উড়িষ্যা, বিহার, এপার ওপার বাংলা অসম ত্রিপুরা অনেকটা জুড়েই। বিভিন্ন জেলা গ্রাম ভিত্তিতে পিঠেরও তাই প্রচুর প্রকারভেদ।

পিঠের বিষয়ে পিঠের বাইরে গিয়ে এক ঝলক দেখে নিলে উপলব্ধি করা যাবে যে আমাদের জীবন এই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছরে কতখানি বদলেছে। গড়িয়াহাটের রাস্তার ষ্টলে বসা ঘুগনি আর আলুর দম উঠে গেছে সেই অপারেশন সানশাইন থেকে, এখনো ইচ্ছে করে খাই সেই জিবে লেগে থাকা ঘুগনি আর পোড়া পোড়া আলুর দম সাথে খানিক তেঁতুলের জল কিন্তু সানশাইনের সেই ঝকঝকে কলকাতায় তা এখন দুস্প্রাপ্য। তবে আধুনিকতা জীবনের অঙ্গ। তাকে অস্বীকার করে উত্তরের থেকে পিঠ করে যদি নস্টালজিয়ায় ভুগে অতীতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত ঝরঝরে। পুরনোকে যক্ষের ধনের মত আগলে না রেখে নতুনকে জায়গা করে দেয়া আমাদের কর্তব্য, সেটা না থাকলে আমাদের অগ্রগতি বন্ধ। খাবার দাবারের চল দেখলেও সেটাই প্রকট। বাজার আমাদের শেখায় প্রতি মুহুর্তে নতুন কিছু করতে, গতানুগতিকের একঘেয়েমির থেকে বাইরে বেরোতে। আমাদের দায়িত্ব হলো নতুন পুরনো দুইকেই সমান সুযোগ দেয়া। ভাল মাল চলবে আর ওঁচা মাল লোপাট হবে, বাজার অর্থনীতির সেটাই মূল মন্ত্র। যেটা নেই সেটা হলো নিয়ন্ত্রণ, যার অভাবে যার টাকা আছে সে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যে তার পন্যই সেরা। সেই জন্য ফান্টা টিকে গেছে গোল্ড স্পট উধাও, যদিও বিন্দুমাত্র পক্ষপাতী না হয়ে বলছি গোল্ড স্পট ফান্টার চেয়ে স্বাদে অনেক গুন ভালো ছিল। আগের সেই জোর যার মুলুক তার এখন এসে দাঁড়িয়েছে পয়সা যার মুলুক তার। আর আমরাও ছুটছি সেই পয়সার পেছনে ইঁদুর দৌড়ে, তাই আজ আমাদের জীবনেও আর অঢেল সময় নেই এসব পিঠে পুলি বানানোর বা ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার। নতুন পুরনো, দেশী বিদেশী, স্বধর্মী বিধর্মী এসব বাছবিচার থেকে বাইরে বেরিয়ে যদি সবকিছুকে চল আর অচলের নিরিখে বিবেচনা করি তাহলে দুইয়েরই ভালোটা আমরা রাখতে পারব আর খারাপটা ছুঁড়ে ফেলতে। সম্পূর্ণ নির্মোহ পক্ষপাতমুক্ত হয়ে যদি সেটা করতে পারি তবেই নতুন পুরনো প্রকৃত মেলবন্ধন সম্ভব। সেটা যতদিন না হবে ততদিন পাড়ায় ফেরিওয়ালার থেকে টাকায় চারটে ডালপুরির জায়গায় রেস্তোরাঁয় গিয়ে ৫০/- টাকা দিয়ে দুখানা ডালপুরি খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

শেষ করছি পিঠে নিয়ে লেখা সেই অতিপরিচিত লাইন দুটো দিয়ে:

পেটে খেলে পিঠে সয়।

পিঠে খেলে পেটে সয়না॥

পরিশেষ: নিচে গোটাকয় লিংক রইলো আরো অন্যান্য পিঠে নিয়ে জানার জন্যে

– উইকি: পিঠের আঞ্চলিক বিভাগ
– বাংলাদেশের আরো কিছু পিঠে
– পশ্চিম বাংলার পিঠে

Advertisement
Standard

2 thoughts on “পৌষ পার্বন পুলি পিঠে আর বিশ্বায়ন

  1. Bolts says:

    এখনো মনে পড়ে তোর বাড়ি গিয়ে কত পিঠে পুলি নারকেলের নাড়ু সাবাড় করেছি। তুই তখন জলপাইগুড়িতে আর সেই সুযোগে আমি প্রায়ই টিফিন তোর বাড়ী তে সারতাম ।

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.