Bengali, canary islands, Mount Teide

তেইদে উপত্যকায় একদিন

তলান্তিক মহাসাগরের বুকে আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর পশ্চিম কোণে সাতটি দ্বীপ। স্পেনের অধীনে তাই স্পেনীয় ভাষায় এদের নাম Islas Canarias বা ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ। তার মাঝে সবচেয়ে বড় দ্বীপ হলো Tenerife। স্পেনীয়রা উচ্চারণ করে তেনেরিফে, ইংরেজরা বলে টেনেরিফ, খটখটে জার্মানরা আরো এককাঠি ওপরে গিয়ে বলে টেনেরিফফা। আকার প্রকারে বিশেষ বড় না হলেও পশ্চিম জগতে তেনেরিফে বেশ চেনা নাম। প্রতি বছর ঝাঁকে ঝাঁকে ইংরেজ ফরাসী জার্মান পর্যটকরা ভিড় করে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জে বিষুবরেখার কাছাকাছি সূর্যের পুরো তেজ উপভোগ করার জন্যে। তার ওপর আছে অতলান্তিক মহাসাগরের সুনীল উচ্ছ্বল জলরাশির হাতছানি। সেসব বিবেচনা করে সোফিয়ার প্রথম বিমানযাত্রার গন্তব্য হিসেবে ঠিক করলাম অক্টোবরের তেনেরিফে, যাতে গ্রীষ্মকালের আগুনে তাপের বদলে শরতের উষ্ণ আবহাওয়ায় ছুটিটা উপভোগ করা যায়। সাতদিনের সেই অবিস্মরনীয় অভিজ্ঞতার পুরো বর্ণনা দেয়া অসাধ্য, তাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিনটার কথাই বিশদভাবে লিখলাম এখানে, তবে সেই সাথে রইল তেনেরিফের একটা সংক্ষিপ্ত ছবি।

তেনেরিফে দ্বীপটার আকার অনেকটা কাঁচা হাতের বানানো প্রথম পরোটার মত – এমনিতে তিনকোনা, উত্তর দিকটা যেন ত্রিভুজের একটা বাহু তারপর পূর্ব আর পশ্চিম দিকের দুটো বাহু দক্ষিনে গিয়ে মিশেছে। আর উত্তর পূর্ব দিকটা যেন খানিকটা টেনে লম্বা করা। ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ হলো অতলান্তিক মহাসাগরের বুক ফুঁড়ে ওঠা কিছু আগ্নেয় পর্বতের সমষ্টি, বহু বছর ধরে উদ্গীরণের লাভা জমে জমে দ্বীপগুলোর সৃষ্টি। তেনেরিফের অন্যতম বৈশিষ্ট সেরকমই এক আগ্নেয় পর্বত Pico de Teide বা তেইদে পর্বতশৃঙ্গ। শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয় ১৯০৯ সালে, সেই তেইদে পর্বকেই বলা যেতে পারে তেনেরিফের মূল কেন্দ্র। তেইদে থেকে শুরু করে গোটা দ্বীপটার চারদিকে আগ্নেয় পাথরের পর্বতমালা, যার উচ্চতা তেইদের আশেপাশে ২৫০০মি থেকে কমতে কমতে একদম তটরেখার কাছে হঠাৎ ঢালু হয়ে সমুদ্রে মিশেছে। একেবারে দক্ষিনে যেখানে ত্রিভুজের দুই বহু মিলেছে সেখানে খানিকটা সমভূমি, বাকি যে কোনো দিকে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উল্টোদিকে চাইলেই দেখা যাবে পাহাড় শুরু হয়ে গেছে আর সবার মাথা ছাড়িয়ে সুদূরে অবস্থান করছে সেই তেইদে যা স্পেনের সর্বোচ্চ পর্বতশিখর। দক্ষিন আর পূর্বদিকের পাহাড়গুলো ঊষর আগ্নেয় পাথরে তৈরী তবে পশ্চিম আর উত্তরে তাকালে দেখা যাবে সবুজ পাহাড়ের রাশি। সেই সব পাহাড়ের রাশি আর সমুদ্র তার মিশ্রনে তৈরী হয়েছে প্রকৃতির এক অননুকরণীয় ভূমিরূপ। বিচ মানেই যে সোনালী বালুকাবেলার ধারণা করি আমরা তেনেরিফের তট তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আগ্নেয় পাথরের আর লাভার সংমিশ্রনে সেই বালির রং ঘোর কালো। সেই কালো সমুদ্রতটে যখন আছড়ে পরে উদ্দাম অতলান্তিক মহাসাগরের ঢেউ, আর দুরে চাইলে সমুদ্র আর আকাশের নীল যে কোথায় মিশেছে তা ঠাহর করা যায়না, তখন মনে হয় প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে এই পৃথিবীকে কি অপুর্বভাবেই না সাজিয়েছে।

পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ সমুদ্রতট

তেনেরিফেতে যে শহরে আমরা ছিলাম তার নাম পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ, উত্তর দিকে এক বড় শহর। উল্লেখ্য যে এই দ্বীপের বেশির ভাগটাই পাথুরে পর্বত বলে তেনেরিফের সব বড় শহরগুলোই একদম সমুদ্রের ধারে। পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ থেকে হাইওয়ে পশ্চিমে চলে গেছে ইকদ দে লস বিনোস হয়ে গারাচিকোর  দিকে যেখানে সমুদ্রে সারি সারি ডলফিন খেলা করে, অনেকে যায় সমুদ্রে শুধু ডলফিন দেখতেই। অন্য দিকে হাইওয়ে প্রথমে পূর্বে তারপর দক্ষিনে বাঁক নিয়ে তেনেরিফের প্রধান শহর সান্তা ক্রুজ দে তেনেরিফে ছুঁয়ে চলে গিয়েছে দক্ষিনে এয়ারপোর্টের দিকে লস ক্রিস্তিয়ানোস, আদেখে অবধি। দ্বীপের এই উত্তর দক্ষিন বিভাগের সাথে জুড়ে আছে মানুষের বেড়ানোর পছন্দ অপছন্দ। দক্ষিন দিকটা খুব বানিজ্যিক, হোটেল বাড়িঘর সব চোখধাঁধানো, খাবারের রেস্তোঁরার রকম অগুন্তি। এদিকে বিশেষ করে আসে ইংরেজরা মার্কিনরা তাদের দেশের বাইরে দেশের সুযোগ সুবিধা স্বাচ্ছন্দ্য বেশি প্রিয়। অন্যদিকে উত্তর দিকে গেলে সবই স্পেনীয়। খাবারের জায়গাগুলো মূলত স্পেনীয় খাবারই বিক্রি করে আর বাড়িঘর সাধারণ। স্পেন দেশে গিয়ে সেখানকার মানুষদের আদব কায়দা রীতি নীতি শিল্প ভাস্কর্য দেখতে হলে উত্তরই শ্রেষ্ঠ। এদিকের বেশীরভাগ থাকতে আসা লোকই জার্মান। উত্তর বেশ প্রাকৃতিক, দক্ষিন সে তুলনায় বেশ কৃত্রিম। তেনেরিফের পূর্ব দিক জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক ছোট ছোট শহর।  পশ্চিম দিকটা সেই তুলনায় অনেকটা দুর্গমই বলা চলে, তবে সেদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও সেই তুলনায় অপূর্ব।

পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ

যে দিনটা নিয়ে লেখার অবতারণা সেই দিনের কথায় যাওয়া যাক। তেনেরিফের উত্তর দক্ষিন সব দিকের রিসর্টগুলো থেকেই তেইদে পর্বতের একটা আদ্ধেক দিনের ট্যুর করা হয়।  তেইদের মূল আকর্ষণ হলো পর্বতের বেস ক্যাম্প থেকে রোপওয়ে যেটা প্রায় হাজার মিটার উঠে তেইদের প্রায় চূড়ায় পৌঁছে দেয়। তবে সেই ওপরের স্টেশন থেকে তেইদের চূড়া আরো ২৫০মি আর সেখানে উঠতে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে, তাই সাধারণ ট্যুরিস্টরা রোপওয়ের শেষে গিয়ে খানিক ঘুরেই ফিরে আসে। ট্যুর গুলো সাধারণত বাসে করে নিয়ে যায়, তাদের তাড়া থাকে আদ্ধেক দিনে সবাইকে ফিরিয়ে আনার, তাই বেশিক্ষণ কাটানো যায়না। সেই সব  বিবেচনা করে আগেই ঠিক করেছিলাম গাড়ি ভাড়া করেই যাব। যে গাড়ি ভাড়া পাওয়া গেল সে তো এক টিনের কৌটো বলা যেতে পারে, তাও একদিন আগে ভাড়া নিয়েছিলাম বলে রক্ষে পাহাড়ি রাস্তায় যাবার আগে বাঁহাতি গাড়ি চালানোর প্রথম অভিজ্ঞতা নাহলে তেমন উপভোগ্য হতোনা। এক দিন চালিয়েও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি ব্যাক গিয়ারটা ঠিক কিভাবে কাজ করে। যাহোক সকালের দিকে কাতারে কাতারে বাস ভিড় করে তেইদেতে তাই যেতে হবে খুব সকালে বা দুপুরের দিকে। ধীরেসুস্থে দুপুরে যাওয়াটাই ঠিক করলাম কারণ সকালের দিকে কুয়াশায় পর্বতের ওপর থেকে কতটা দেখা যাবে সেই ভেবে। ১১টা নাগাদ যাত্রা শুরু হলো পুয়ের্তো দে লা ক্রুজকে পেছনে ফেলে। শহরে যাবার মূল রাস্তা যেখানে হাইওয়েতে মিশেছে সেখানে ডানদিকে মোড় নিয়ে শুরু হলো চড়াই ভাঙা। হাইওয়ে ছেড়েই প্রথম রাস্তায় পড়বে লা ওরোতাবা (La Orotava) বলে একটা ছোট আর সুন্দর শহর। লা ওরোতাবায় নাকি তেনেরিফের যত নামজাদা লোকজন তাদের বাড়িঘর ছিল আঠার উনিশ শতকে।শহরের মেন রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই মনে হছিল রাস্তার চড়াই বেশ খাড়া। ওরোতাবাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললাম পিকো দে তেইদের দিক নির্দেশ করা রাস্তা ধরে। রাস্তার দুপাশে টিপিক্যাল স্পেনীয় বাড়িঘর, এক এক বাড়ির এক এক রকম আকার আর রঙ, পশ্চিম ইউরোপের মত একঘেয়ে লাল টালির নয়।  বাড়ি দোকান এসবের পেছনে ঘন গাছগাছালি তারপর পাহাড় উঠে গেছে ওপরের দিকে। অন্য দিকে ঢালের দিকে তাকালে নিচে ওরোতাবা আর আরো দুরে পুয়ের্তো দে লা ক্রুজের সীমানা ছাড়িয়ে দিগন্তরেখা অবধি সুনীল অতলান্তিক। খানিক রাস্তা হারিয়ে তারপর ফের আসল রাস্তা খুঁজে পেয়ে এগিয়ে চলল গাড়ি একে একে ছোটো ছোটো জায়গা পেরিয়ে। আসিয়েন্দা পের্দিদা, সিয়েরা ইত্যাদি ছাড়িয়ে প্রথম স্টপ চাসনা বলে একটা জায়গায় শুধু দেখে নেয়া নিচে ফেলে আসা ওরোতাবা উপত্যকা। এখানেই ঘটল অঘটনটা। জেনিফার গোটাকয় ছবি তুলে ফিরেছে, সোফিয়া ঘুমোচ্ছে, ঢালে গাড়ি ব্যাক করতে গিয়ে দেখি গিয়ার কাজ করছেনা, আর যতবার চালু করার চেষ্টা করছি গাড়ি ততবারই খানিটা করে গড়িয়ে সামনের পাথরের দেয়ালের দিকে এগিয়ে চলেছে। যখন ইঞ্চি দুই দুরে, কপালজোরে ব্যাক গিয়ারটা লেগে গেল, আমরা আবার ১০মিনিট ঘাম ঝরিয়ে এগিয়ে চললাম আগুয়ামানসা বলে একটা জায়গার দিকে। একে একে দেখছি উচ্চতা পাল্টাতে আরম্ভ করেছে রাস্তার ধারের মার্কারগুলোয়। আগুয়ামানসা প্রায় ১৩০০ মিটার উঁচুতে সমুদ্র থেকে। আগুয়ামানসার পর রাস্তার দুপাশের দৃশ্য বদলে গেল।  ঘরবাড়ি আর নেই এবার দুদিকেই ঘন চিরহরিৎ গাছের জঙ্গল। পাহাড়ি গাছগাছড়ার সাথে তেমন পরিচিতি নেই তাই পাইন আর রোডোডেনড্রন এদুটোই শুধু চেনা গেল। খানিক পর পরই এই জঙ্গলে ঘেরা রাস্তার মাঝে ভিউয়িং পয়েন্ট যাতে লোকজন থেমে সামনের দৃশ্য দেখার জন্য থামতে পারে। এখান থেকে উত্তরের দৃশ্য অসামান্য। নিচে তাকালে ঘন গাছের মাথা ছাড়িয়ে পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ তখন পিং পং বলের মত ছোট।  বাকি চারদিকে নীল আর নীল। কোথায় আকাশ আর কোথায় সমুদ্র তা হলফ করা দুঃসাধ্য, খালি সমুদ্রটা একটু যেন বেশি গাঢ় নীল। অন্যদিকে কুয়াশা ঢাকা পর্বত উঠে গেছে ওপরের দিকে, আর দুরে আবছা দেখা যাচ্ছে তেইদের সীমারেখা। নিচে পুয়ের্তো দে লা ক্রুজে ঝলমলে দিন হলেও এখানে ওপরের দিকে বেশ কুয়াশা, মনটা খানিকটা মুষড়ে গেল কুয়াশা কাটবে কিনা সেই চিন্তায়। রওনা দিয়ে ঠিক করলাম বেলা হয়ে যাচ্ছে আর থামবনা কোথাও তেইদের আগে। জঙ্গল যে কে সেই দুদিকে ছেয়ে আর দেখছি উচ্চতা একটু একটু করে বেড়েই চলেছে ১৫০০..১৬০০..১৭০০মি।

পাইন অরণ্য তেইদের পথে

প্রায় ১৮০০ মিটারে এসে একটা বাঁক নিয়েছি হঠাৎ চারপাশটা যেন আবার হুশ করে বদলে গেল। গাছপালা জঙ্গল নিমেষে উধাও, শুরু হয়ে গেছে পাথুরে পর্বতরাশি। আগ্নেয় পাথরের সেই ভূমিরূপে বিচিত্র সব রঙ হলুদ থেকে কমলা আর বাদামী থেকে কালোর কতরকমের যে সংমিশ্রণ হওয়া সম্ভব, সেই পাথুরে এলাকা না দেখলে বিশ্বাস হতনা। আর খানিকটা উঠে চোখে পড়ল বিরাট বড় সাইন পার্কে নাসিওনাল দেল তেইদে (Parque nacional  del Teide)।  এখান থেকেই শুরু তেইদের চড়াই। আমরা তখন প্রায় ১৯০০মি উঁচুতে, আকাশ ঝকঝকে নীল, কোনো মেঘের চিহ্নমাত্র নেই, কুয়াশা ফেলে এসেছি নিচে। প্রায় ২০০০মি উঁচুতে উপস্থিত হলাম এক আশ্চর্য জায়গায় যার নাম মিনাস দে সান হোসে (Minas de San José) বাংলায় অনুবাদ করলে সান হোসে খনি। রাস্তার দুপাশে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা। এ জায়গা আগে ছিল ঝামা পাথরের খোলা খনি। এখানে পায়ের নিচে জমি কমলা বাদামী মেশানো রঙের ঝামা পাথরের কাঁকর। হাজার হাজার বছর ধরে আগ্নেয়গিরির লাভা, সূর্যের তেজ, দিন-রাতের তাপমাত্রার ওঠানামা আর তেজি হাওয়া এই সবে মিলে তৈরী করেছে সেই অসাধারণ ছবির মত ল্যান্ডস্কেপ। সেই কাঁকরে ঢাকা ঢেউ খেলানো জমি রাস্তার ডানদিকে উঠে গেছে তেইদেকে ঘিরে থাকা পর্বত গুলোর দিকে। এদিকে তাকালে কাঁকরে ঢাকা জমিতে মাঝে মধ্যে চাগিয়ে উঠেছে ছোট বড় পাথরের স্তুপ। আর তার পেছনে অনন্য গরিমায় দাঁড়িয়ে আছে তেইদে পর্বত, ২২০০মি উচ্চতা থেকে দেখলেও মনে হবে পর্বতের মাথা যেন আকাশকে ছুঁয়ে আছে। অন্যদিকে রাস্তার উল্টোপাড়ে সেই কাঁকুরে জমি অল্প ঢালে নেমে গিয়েছে নিচের দিকে। সেদিকে খানিক দূর গিয়ে বড় বড় পাথরের চাঁইগুলোর ভেতর দিয়ে নিচের দিকে তাকালে সে দৃশ্যাবলী মনের মধ্যে চিরদিনের জন্যে গেঁথে থাকবে। পাথরের স্তুপের পর জমি খাড়া নেমে গিয়েছে কয়েকশ মিটার কিন্তু তারপর সমতল জমি বিস্তৃত প্রায় কয়েক মাইল, তার শেষে পর্বতরাজি উঠে গেছে কয়েকশ মিটার। তেইদের চারদিকে সমতলভূমি পেরিয়ে এই পর্বতগুলো নির্দেশ করছে পার্কে নাসিওনাল দেল তেইদের সীমানা, যার উল্টোদিকে ঢাল নেমে গেছে ফেলে আসা পাইন অরণ্যের দিকে। বেশি দেরী হয়ে যাবার চিন্তায় হাতের আর মনের ক্যামেরায় ঊষর সেই তেইদে উপত্যকার ছবি সঞ্চয় করে এগিয়ে চললাম মূল আকর্ষণের দিকে, তেইদে পর্বত আর কেবল কার যার পোষাকী নাম তেলেফেরিকো দেল তেইদে। মূল রাস্তার থেকে ডানদিকে মোড় ঘুরে রাস্তা খাড়াই উঠে গেছে তেইদের এই বেস ক্যাম্পে।

মিনাস দে সান হোসে
তেইদে উপত্যকা

তেইদের রোপওয়ের সেই নিচের প্রান্তে তখনো গাড়ির ছড়াছড়ি। মেন কারপার্ক ছাড়াও চড়াই রাস্তার আশেপাশে পাথরের ওপর অনেক পার্কিংয়ের জায়গা, সব ভর্তি। ভাগ্যক্রমে একটা জায়গা খুঁজে পেয়ে গাড়িটা রেখে রওনা দিলাম টিকিট কাউন্টারের দিকে। গিয়ে দেখি রোপওয়ের কর্মচারী বলছে সোফিয়ার ওপরে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। রোপওয়ের অপরের প্রান্ত ৩৫৪০মি উঁচুতে, সেখানে অক্সিজেন তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তেমন অসুবিধা না হলেও ছোট বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এই সব ভেবে জেনিফার রয়ে গেল সোফিয়ার সাথে নিচে, আমি টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে পড়লাম রোপওয়ের লাইনে। কেবল কারের এই জায়গাটা থেকে তেইদের শিখর দেখা যায়না। সামনের ঢালটা এত খাড়া যে চূড়াটা তার পেছনে ঢাকা পড়ে আছে। রোপওয়ে বলতে এলাহী ব্যাপার। বিরাট বড় বড় টাওয়ার তার দুদিকে দুটো কেবল লাইন, একটা কার যখন নিচে, অন্যটা তখন ওপরে, দুটো একসাথে যাত্রা শুরু করে সব সময়, ২৫০০মি থেকে ৩৫৪০মি এই পুরো দূরত্ব যেতে সময় লাগে মোটে ৮ মিনিট। লাইনে বাঙালির অভ্যেসমত ঠেলেঠুলে একদম সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম কেবল কারের কাঁচে ঘেরা বাক্সর সামনে জায়গা করে নেবার জন্য। একটু দোল খেয়ে কার যখন চড়া শুরু করলো তখন বেশ উত্তেজনা বোধ করছিলাম, ৫০মি নাগাদ যাবার পর যখন সেটা পুরো গতিতে চলতে শুরু করলো হঠাৎ খেয়াল হলো মাটি থেকে প্রায় ৫ তলা উঁচুতে রোপওয়ে চলছে, দড়ি ছিঁড়ে গেলে সাথে সাথে ভবলীলা সাঙ্গ । তার ওপর প্রতিটা টাওয়ার ক্রস করার পর ফিজিক্সের নিয়ম মেনে কেবল লাইনটা খানিকটা নিচে নেমে আসে আবার ওপরের দিকে যাবার আগে, সেই সময়টা মনে হয় যেন কারটা নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। যাহোক, রাস্তার মাঝামাঝি সেই খাড়া চড়াই শেষ হলো, সামনে দাঁড়ানোর সুফল এতক্ষণে পাওয়া গেল, সামনে তেইদের শৃঙ্গ সমস্ত জানলা জুড়ে। ঠিক ৮ মিনিটের মাথায় কার থামল ওপর প্রান্তে। পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ ছাড়ার সময় তাপমাত্রা ছিল ২৮, এই ৩৬০০মি উঁচুতে সেটা দাঁড়িয়েছে ৮ ডিগ্রী। বাইরে বেরিয়ে তেইদের দিকে তাকিয়ে মনটা উদাস হয়ে গেল। উত্তরবঙ্গে কলেজে থাকার সময় পাহাড়ে যেত বন্ধুরা কিন্তু আমার সেরকম পাহাড় চড়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এতদিন বাদে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি স্পেনের শীর্ষতম শৃঙ্গের প্রায় চূড়ায়, মাঝের পনের বছরে জীবন বদলে গিয়েছে বেশ। আর সেই মুহুর্তে এখানেও আমি একেবারে একা, এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা কেবল আমার মনেই রয়ে যাবে, খানকয় ছবি থাকবে বটে কিন্তু সেই শিহরণ জাগানো মুহুর্তটা ভাগ করে নেয়া যাবেনা আর কারো সাথে। এসব ভেবে তাড়াতাড়ি আবার নিচে ফেরত যাব ঠিক করে খানিকটা দেখে নিলাম যতটা সম্ভব। রোপওয়ের ঘরের বাইরে পাথর কেটে তৈরী করা রাস্তা দুদিকে চলে গেছে দুটো ভিউয়িং পয়েন্টের দিকে। পশ্চিম দিকে গেলে দেখা যাবে আর একটা মৃত আগ্নেয়গিরি পিকো বিয়েখো (Pico Viejo), আর পূর্বদিকের পথের শেষে দেখা যাবে পুরো উত্তর দিকের ভূমিরূপ, কালো লাভা, মন্তে ব্লানকো পাইন অরণ্য ওরোতাবা উপত্যকা। আর এই দুই রাস্তার মাঝে ধাপে ধাপে কাটা পাথরের পায়ে হাঁটা পথ উঠে গেছে তেইদের শিখরে যেখান থেকে নাকি বাকি ছটা ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপই দেখা যায়। ট্র্যাভেল গাইড বলছে তেইদের চুড়ায় গেলে রাতটা সেখানেই কাটাতে তাহলে সকালে সূর্য ওঠার সময় এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা দেখা যায় যখন তেইদের তিনকোণা ছায়া ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে দুর থেকে দুরান্তে। এই ভরা দুপুরেও রোপওয়ের এই প্রান্ত থেকে সামনের দৃশ্যের বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। উত্তর দিকে সমস্তটা জুড়ে তেইদে পর্বত পড়ন্ত রোদে ঝলমল করছে। নিচের দিকে খালি দক্ষিণ দিকটাই ভালো করে দেখা যাচ্ছে, সেদিকে যতদুরে চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড় যেন ধাপে ধাপে নেমে যাচ্ছে অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে। একটা নতুন শব্দের সাথে প্রথম পরিচয় হলো এই সময়। টিকিট কাউন্টারে দেখছিলাম লেখা আছে “Visibility limited due to Calima”, এই কালিমা হলো গরম হাওয়া, নিচের দিকের পাথর গরম হয়ে সৃষ্টি এই কালিমার দরুন সামনের দৃশ্য অনেকটাই আবছা, অনেকটা যেন কুয়াশার বিপরীত। পায়ে হাঁটা রাস্তার দুদিকেই বড় বড় পাথরের স্তুপ, বাতাসে গন্ধকের চড়া গন্ধ, পৃথিবীর কেন্দ্রের সেই গলন্ত লাভায় মিশে থাকা গন্ধক পাথরে পরিনত হয়েছে। সামনের তিনটে পথের কোনটাতেই যাবার সময় বা অনুমতি নেই কাজেই আবার দাঁড়িয়ে পরলাম নিচে ফিরে আসার লাইনে, এবারো জানলার সামনের দিকে, তবে দক্ষিণে যেদিকে নামব সেদিকে মুখ করে। পায়ের নিচে পড়ে রয়েছে ১০০০মি পাহাড়। গায়ে কাঁটা দেয়া দৃশ্য আর পায়ের তলার আপাত ভারহীনতায় ভরা ৮ মিনিটে সেই দুরত্ব অতিক্রম করে আবার যাত্রা শুরু হলো দিনের শেষ গন্তব্যে, লস রোকেস দে গার্সিয়া (Los roques de García) আর য়ানো/যানো দে উকাঙ্কা (Llano de Ucanca), তেইদের কারপার্ক থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দুরে।

তেইদের চূড়া রোপওয়ের ওপরের প্রান্ত থেকে
কেবল কার আর নিচের লাভায় তৈরী ভূমিরূপ

তেইদের কার পার্ক থেকে পরের আকর্ষণ অনেকে হেঁটেও যায়, গাড়ি চলা রাস্তার থেকে দুরে একটা হাঁটাপথ আছে তেইদের পাদদেশের পাথুরে সমতলের মধ্যে দিয়ে। রাস্তার বাঁদিকে পারাদোরেস বটে একটা হোটেল, এমন অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত এই হোটেলে রুমের চাহিদা বলাই বাহুল্য অশেষ, বিশেষ করে পর্বতারোহী হাইকারদের কাছে তেইদে আর তার চারপাশের এলাকা যখন স্বর্গোদ্যানের সমান। আসল চমক তবে রাস্তার ডানদিকে। মেন রাস্তা থেকে বাঁক নিয়ে এখানে রাস্তার দুপাশে গাড়ি রাখার জায়গা। ১০০-১৫০মি দৈর্ঘ্যের সেই রাস্তার শেষে এক ভিউয়িং পয়েন্ট। ডানদিকে উঁচিয়ে থাকা পাথরের স্তুপের পোষাকী নাম লস রোকেস দে গার্সিয়া। কেউ কেউ আবার বলে লা রুলেতা। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, গড়িয়ে আসা বিকেলের সূর্যের আলোয় এই পাথরের স্তুপের সৌন্দর্য অসামান্য। আগ্নেয় শিলার এই স্তুপের পরতে পরতে বিচিত্র সব রঙের খেলা। একদম ডানদিকে, তেইদের চুড়াকে পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে প্রবাদপ্রতিম এক প্রাকৃতিক শিলারূপ, তেইদে ন্যাশনাল পার্কের যে কোনো বর্ণনায় যার ছবি বা উল্লেখ পাওয়া যায়। পাথরের এই রাশির আকার অনেকটা উল্টোনো কমার মত, হাজার হাজার বছরের প্রাকৃতিক অবক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট এই অবয়ব যে কোনো ভাস্করের কৃতির সাথে পাল্লা দিতে পারে। পাশের পাথরের ঢিবির ওপর চড়ার ছোট ছোট ধাপ রয়েছে, কিছুটা ওপরে উঠতে পারলে চারদিকের দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। উত্তরে শুকনো জমিতে বেড়ে ওঠা ঘাস আর ছোট ছোট ঝোপে ঢাকা সমতলভূমি চলে গিয়েছে তেইদের পাদদেশ অবধি। খানিকটা পশ্চিমে দেখলে রয়েছে পিকো বিয়েখো, আর দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে মন্তে গুয়াখারা (Mt Guajara)। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে দক্ষিনে তাকালে সামনের দৃশ্য অতিপ্রাকৃত। গুয়াখারার পেছন থেকে পর্বতের সারি বিস্তৃত পুরো দক্ষিন আর দক্ষিন পূর্ব দিক জুড়ে। তবে সেই পর্বত আর ভিউয়িং পয়েন্টের মাঝে ছেয়ে রয়েছে এক সুবিশাল সমতল ভূমি যার নাম য়ানো (স্পেনীয় উচ্চারণ) বা যানো (দঃ আমেরিকা) দে উকাঙ্কা।  রাস্তার উল্টোদিকে পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে সিঁড়ি তৈরী ভিউয়িং পয়েন্ট লস আজুলেখোস (Los Azulejos) যেখান থেকে উকাঙ্কা সমতলভূমিকে খানিকটা ওপর থেকে আরো ভালো করে দেখা যায়। ধু ধু করা সেই জমির থেকে উঠে আসছে হালকা কালিমা, মাঝে মধ্যে লাভাস্রোতে তৈরী বিচিত্র সব ঢেউ খেলানো আকার আর আগ্নেয় শিলারূপ – এসবের সমষ্টিতে তৈরী সুররিয়াল দৃশ্যকল্পের জন্য উকাঙ্কাকে মঙ্গল গ্রহের ভূমিরূপের সাথে তুলনা করা হয়। মন বিহ্বল হয়ে যায় এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে, মনে পড়ে যায় “মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকালমাঝে …”

রোকেস দে গার্সিয়ার শিলাস্তুপ
রোকেস দে গার্সিয়া / লা রুলেতা আর পেছনে তেইদে পর্বত
য়ানো/যানো দে উকাঙ্কা (উকাঙ্কা সমভূমি)

সম্বিত ফিরে আসে জেনিফারের ফোন সোফিয়ার জলের কাপে পড়ে যাওয়ায়। এবার ফেরার পালা, মন যদিও চায় এই বিশালতার মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে। ফেরার পথে আর দাঁড়ানো নয়, সোজা পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ। দেখা হলনা অনেক কিছুই —তেইদের জ্বালামুখ, ভোরের সেই ত্রিভুজ ছায়া, স্পেনের সর্বোচ্চ গ্রাম বিলাফ্লোর (Vilaflor), গুয়াখারার বিপরীত ঢালে অবস্তিত পাইসাখে লুনার (Paisaje Lunar) বা চান্দ্রেয় ভূমিরূপ, তেইদে থেকে রাতের আকাশ – তবে সেসব তোলা রইলো ভবিষ্যতের জন্য, সোফিয়া একটু বড় হলে আবার আসা যাবেখন। ফেরার পথ যদিও একই রাস্তা, দুরত্ব মনে হচ্ছে যেন তিনগুন, আর উৎরাইতে গাড়ি চালানোও কঠিন। পাইন অরণ্য ছাড়িয়ে আগুয়ামান্সার কাছে আবার এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ওরোতাবা উপত্যকার গা ঘেঁষে নেমে আসা রাস্তা তখন মেঘে ঢাকা। ফগ লাইট জ্বালাতে হলো গাড়িতে, এরকম চলল বেশ কিছু মাইল প্রায় খোদ ওরোতাবা শহর অবধি। ততক্ষণে পাহাড়ের গা জুড়ে লেগে থাকা মেঘের দেয়ালের ওপর থেকে নিচ পুরোটাই ছাড়িয়ে নিচে দেখা যাচ্ছে মেঘে ঢাকা পুয়ের্তো দে লা ক্রুজ। প্লেনে চড়ার সময় এরকম অনুভূতি হয় জানি যেখানে মেঘের নিচে অন্ধকার অথচ ওপরে সব পরিস্কার, কিন্তু রাস্তাতেও যে এরকম ঘটনার সাক্ষী হতে হবে কখনো ভাবিনি। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতামনা যে মেঘে ঢাকা বিমর্ষ করে দেয়া সেই বিকেলে মেঘের সীমানা ছাড়িয়ে এমন জায়গাও আছে ওপরের দিকে যেখানে আকাশ নীলে নীলাকার, সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা খুঁজলেও এক টুকরো মেঘ চোখে পড়বেনা।  একটা দার্শনিক উপলব্ধি হল যে এই ধারনাটা আমরা আমাদের জীবনেও প্রয়োগ করতে পারি – যখন পরিস্থিতি প্রতিকুল, মন বিষন্ন তখন এই বিকেলটার কথা মনে করে মনকে বলা যেতেই পারে যে ওপরের ওই মেঘের রাশি, জীবন সেখানেই সীমিত নয়, প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে মাথা তুলে মেঘের ওপারে তাকালেই সেখানে তখন ঝলমলে এক দিন, নীল আকাশ বিরাজ করছে। খালি মনে বিশ্বাস বজায় রাখতে হবে যে সেটা সম্ভব।

যখন এই লেখাটা লিখতে বসেছি প্রায় দুসপ্তা সময় পার হয়ে গেছে। জীবন ফিরে এসেছে আবার সেই গতানুগতিকে – অফিসের চাপ, আর্থিক চিন্তা, সাংসারিক টানাপোড়েন জীবনকে আবার গ্রাস করে নিয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে রয়ে গেছে সূর্যালোকে ঝলমল করা উষ্ণ তেনেরিফের দিনগুলো বিশেষ করে সেই ৫ই অক্টোবরের স্মৃতি।  সেখান এখনো অমলিন হয়ে বিরাজ করছে তেইদের অভ্রংলীহ চূড়া, কেবল কারের রোমহর্ষক যাত্রা, উকাঙ্কার অপ্রাকৃত ভূমিরূপ আর রোকেস দে গার্সিয়ার অনবদ্য শিলারূপগুলো। সেই স্মৃতিগুলো যা মনে করিয়ে দেবে যে দৈনিক টানাপোড়েনের শেষে আবার এসে যাবে একটা ছুটি, আবার একটা হাতছানি পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে লুকিয়ে থাকা অন্য কোনো অপার্থিব অভিজ্ঞতার। এখনো অনেক দেরী তার তবে এক এক দিন করে ঠিকই কেটে যাবে একটা গোটা বছর, ততদিন তো রইলই তেইদের সঙ্গ…

পরিশেষ: সাধারণত ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আমি লিখি ডায়েরিতে, খুব কম লেখাই আছে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে অনেকেই জানে আর আসাটা খুবই প্রচলিত। অন্যদিকে বাঙালী সমাজে ইউরোপ বেড়ানোর চল মুদ্রাহারের তারতম্যের জন্য বেশ বিরল, তবু স্বচ্ছল পরিবারের মানুষরা বেড়াতে যায় সাধারণত আর পাঁচটা দর্শনীয় জায়গা বলে আমরা যেগুলো সারা জীবন জেনে এসেছি, যেমন লন্ডন, প্যারিস, দক্ষিন ফ্রান্স, ইতালি, গ্রীস, সুইজারল্যান্ড। স্পেন বেড়ানোর তেমন চল যে আছে তা দেখিনি, আর থাকলেও সেটা মূল ভূখন্ডেই সীমাবদ্ধ মাদ্রিদ, সেবিলা, বার্সেলোনা, মালাগা। সুদুর অতলান্তিকের ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জে বাঙালি পর্যটক আশা করাটা দুষ্কর আর অভিজ্ঞতাও সেটাই দেখালো। ভারতীয় টুরিস্ট একজনও দেখেছি বলে মনে করতে পারছিনা। কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবার থাকে তেনেরিফেতে, পেশায় মূলত ব্যবসায়ী কিন্তু সেই অবধিই। বাঙালীদের সাথে সাক্ষাত হয়নি বললে ভুল হবে। ইংল্যান্ডের মত অসংখ্য না হলেও তেনেরিফেতে গোটাকয় ভারতীয় রেস্তোরাঁ আছে যেগুলো চালায় সিলেটি বাংলাদেশীরা। বাঙলার সাথে ওটুকুই যা যোগাযোগ। সে কথা ভেবেই এ লেখার অবতারণা যাতে অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে আগ্নেয় পর্বতে ঘেরা সেই তেনেরিফের একটা চিত্র তুলে ধরা যায় বাঙালিদের কাছে। 

Advertisement
Standard

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.