Film review

চাঁদের পাহাড়: চলচ্চিত্র আলোচনা

বিটা বেশ কিছুদিন আগে দেখা তাই মনে হয়না এরকম একটা রিভিউ কেউ কারো কাজে আসবে। তবু যখন আমার এক কলিগ বলল চাঁদের পাহাড় দেখব, মনে হলো এটা যখন সিনেমাটা দেখেছিলাম তখনই লেখা উচিত ছিল। একে এমপি তার ওপর আবার মহানায়ক, জানিনা লোকে কি বলবে। যাই হোক চাঁদের পাহাড় দেখে মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল সেগুলোই এক এক করে লিখলাম।

১. আমি বিন্দুমাত্রও হোমোফোবিক নই কিন্তু সিনেমায় আলভারেজ আর শঙ্কর এমন হাত ধরাধরি, জড়াজড়ি করছিল সাবটাইটল না থাকলে ছবির থীমটা যে কি সেটা দূর্বোধ্য, মনে হচ্ছিল দুই পুরুষ প্রকৃতির মাঝে তাদের মধ্যের প্রেম উপলব্ধি করেছে।

২. কোন সিনেমা তার স্বাভাবিক ছন্দে যদি দেড় ঘন্টা লম্বা হয় তাকে টেনে হিঁচড়ে আড়াই ঘন্টা চালালে সিনেমার আকর্ষণ তেমন থাকেনা আর দর্শকদেরও মনে হতে শুরু করে কি কুক্ষণে টিকিট কেটেছিলাম। নাকি পরিচালক ভেবেছিলেন যেরকম সবাই খুঁজে খুঁজে সেই দোকানে যায় যেখানে রোল এ একটু বেশি আলু দেয়, সেরকম লোকে যদি আড়াই ঘন্টা সিনেমা না চলে বলবে ফ্লপ ?

৩. চলচ্চিত্রায়ন অসামান্য, তবে আফ্রিকা তার সমস্ত বিস্ময় এই ছবির একমাত্র পাওনা। বাকি সব বাকওয়াস।

৪. ভারত আইটির দেশ, হলিউডের অনেক সিনেমার স্পেশাল এফেক্টও এখন ভারতে হয়, তবু এই সিনেমার স্পেশাল এফেক্ট এরকম জোলো কেন বোঝা গেলনা। নাকি প্রযোজক মশাই শুটিং টিম কে আফ্রিকা পাঠিয়েই সব পয়সা খরচ করে ফেলেছিলেন? আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ তো ষাটের দশকের মনে হচ্ছিল। এর চেয়ে তো ইদানিং অনেক বাংলা সিনেমায় অনেক ভালো স্পেশাল এফেক্ট আছে।

৫. প্যানপেনে মা আর হেঁপো বাবার অবতারণা কি কারণে দরকার হলো বোঝা গেলনা, যদিওবা মেনে নেওয়া গেল আফ্রিকা যাবার আগে শঙ্করের জীবনের কিছুটা দেখানোর জন্যে কিন্তু বাকি সময় মনে হচ্ছিল ছবি লম্বা করার খুব বিরক্তিকর পদ্ধতি।

৬. সিংহ শিকারের নতুন টেকনিক শেখা গেল. প্রথমে সিংহকে মাংস-টাংস দিয়ে লোভ দেখিয়ে ডাকতে হবে, তারপর সিংহ যখন শিকারীর দিকে তেড়ে আসবে তখন প্রানপনে উল্টো দিকে দৌড়তে হবে। যখন সিংহ প্রায় ধরে ফেলেছে তখন জেসন স্ট্যাথামের মত উড়ে গিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গুলি চালাতে হবে। সেই গুলি সিংহের মাথায় লাগবেই আর সে এক গুলিতেই কাবার হবে। জে.এ.হান্টার এর শিকারের গল্প মনে পরে গেল। তিনি নির্ঘাত কবরে নড়েচড়ে উঠতেন এই নতুন উপায়ের কথা শুনে। বললে হবে, আমাদের মহানায়ক বলে কথা, হান্টার তো কোন ছার।

৭. কোন কোন রহস্য যত অদৃশ্য রাখা যায় ততই রোমাঞ্চকর লাগে। এমিটিভিল হরর বা হিদেও নাকাতার রিঙ এ অপ্রাকৃত কিছু একদম শেষ অবধি দেখানো হয়নি। বিভুতিভুষনের শঙ্কর ও কিন্তু বইতে শুধু বুনিপের আওয়াজ আর তার পায়ের শব্দই শুনেছিল। ব্যাপারটাকে সিনেমাতেও সেই অবধিই সীমিত রাখলে ভালো হতো। বুনিপ বলে যা দেখানো হলো সেটা তো একটা ভুঁড়িঅলা প্যাঙ্গোলিন তার ওপর একটা ডাইনোসরের মাথা লাগানো। এমন হাস্যকর অনুকরণ এর একটাই ঘটনা মনে আছে, আবার যখের ধন সিরিয়ালটায় গরিলা সাজা লোকটা।

৮. যখন শঙ্কর আর আলভারেজ কোন এক বিখ্যাত লেক পার হচ্ছিল ওদের সাথে ছিল একটা ছোট ডিঙ্গি নৌকা, আর সীমিত খাবারদাবার। এদিকে যখন তাঁবু ফেলছিল সেই তাঁবু দেখলে তো রাজারাজড়াদেরও বিষম খাবার কথা। দেখে মনে হচ্ছিল কোনো আরব শেখ বনে শিকার করতে গেছে, দুজন উৎসাহী পরিব্রাজক নয় যারা তাদের সব সম্বল নিঃস্ব করে বেরিয়ে পড়েছে ভ্রমন করতে। দু দুটো ঢাউস ধবধবে সাদা তাঁবু বুনিপ তো বটেই জঙ্গলের আর যত জীবজন্তু ছিল সবারই তো চলে আসার কথা মানুষ সার্কাস দেখতে।

৯. গুহা থেকে বেরিয়ে বুনিপ মারতে যাওয়া আর এক হাস্যকর ব্যাপার, সেই সিনেমা লম্বা করার চাল। অত সব কাঠকুটো কথা থেকে এলো, অত অত দড়িই বা কোথা থেকে এলো ফাঁদ বানানোর জন্যে তা চিন্তার বাইরে। দিকহারা, ক্ষিধেয় পাগল মানুষ অতক্ষণ ফাঁদ বানাতে কাটাল এটা সিনেমাতেই চলে।

যাক লিস্টি আর বাড়িয়ে কাজ নেই, একেই ফালতু সময় নষ্ট অনেক করেছি সিনেমাটা দেখতে বসেই।

Advertisement
Standard

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.